ইয়াছির আরাফাত ::
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সড়কে দোয়েল পাখি রেস্তোরাঁয় চলছে গলাকাটা বাণিজ্য ও পঁচা বাসি খাবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রোগীর স্বজন গোলাম কিবরিয়া আহমেদ এমন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, বিগত দু’দিন ধরে অসুস্থ মাকে নিয়ে কক্সবাজার সদর হসপিটালে অবস্থান করছিল।
কিন্তু দোয়েল পাখি রেস্তোরা হাসপাতালের পার্শ¦বর্তী থাকায় রাতের খাবার খেতে রেস্তোরাতে যায় অর্ডার করার মিনিট দশেক পর খাবার পরিবেশন করলেন হোটেলের এক কর্মচারী। খাবারের প্লেটে হাত রেখে গরম গরম খাবারটি দেখে মনে মনে ভাবলাম বেশ আরাম করেই খাওয়া যাবে। তবে খাবারটি মুখে তুলতেই সেই ভাব দূর হয়ে গেল। মুখে দেওয়ার সময়ই দূর্গন্ধ আসে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবারটি থেকে। একটু খেয়েই হোটেলের মালিনকে বিষয়টি জানালাম কিন্তু মালিক সে বিষয়ে কথা না বলে ৩৭০ টাকার একটি বিল দিয়ে বলল কালকে থেকে একটু জলদি আসবেন আপনার জন্য ভালো খবরটাই দিব। বললাম আমিতো খাবারটাই খেতে পারিনি এত টাকা দিব কেন? সঙ্গে সঙ্গে মালিক বলে উঠলো খেতে পারেন বা না পারেন বিল দিতেই হবে। তর্ক না করে দাম মিটিয়ে বেরিয়ে আসলাম। তারপর হাসপাতালে অসুস্থ মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার পর পেট ব্যাথা অনুভব করলাম। এরপর তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করে সুস্থতা অনুভব করি।
ক্ষোভের সঙ্গে কক্সবাজার বার্তা’কে গোলাম কিবরিয়া আহমেদ তার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, শহরের অলি—গলিতে গড়ে ওঠা ভূরি ভূরি বিরিয়ানি হাউস বা রেস্টুরেন্টের এই সমস্যা ছাড়াও বড় সমস্যা হলো নোংরা পরিবেশ।
কিন্তু যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব রেস্টুরেন্টে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছে দাবি যেন নোংরা পরিবেশের নষ্ট খাবার খেয়ে আমার মত হাসপাতালে স্বজনদের নিয়ে আসা কেউ যাতে অসুস্থ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে নিয়মিত রেস্টুরেন্টগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
অন্যদিকে সরেজমিনে হাসপাতাল সড়কের দোয়েল পাখি রেস্তোরাতে গিয়ে দেখা যায়, রান্নাঘরের পরিবেশ খুবই দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায়। খাবার খেয়ে বেরিয়ে আসা দুই একজন লোকের সাথে কথা হলে তারা জানান, রেস্টুরেন্টের খাবারের মান খুবই বাজে এবং খাবারের দাম দেখে মনে হলো যেন তাদের ইচ্ছে খুশি মত ধার্য্য করেছে। আমরা দূর দূরান্ত থেকে কক্সবাজার সদর হসপিটালে স্বজনদের চিকিৎসা করানোর জন্য আসি এবং খাবার খাওয়ার জন্য হাসপাতালের আশেপাশের রেস্টুরেন্টগুলোতে যায়, কিন্তু সে খাবার পেট ভরে কখনো খেতে পারি না। কারণ হোটেল রেস্টুরেন্ট গুলোর খাবারের মান খুবই খারাপ, এতই বেশি খারাপ যে মুখ দিয়ে ঢুকলে ও গলা দিয়ে নামে না, আবার অনেক টাকার খাবারের বিল ধরিয়ে দেয় হাতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, সে কোন আইন মানে না, এরকম কঠোর চলমান লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সে কোনভাবে তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে তার রেস্তোরা ব্যবসা। এতেও মানা হয় না কোন ধরণের স্বাস্থ্যবিধি। তিনি আরো বলেন, দোয়েল রেস্তোরার মালিক নুরুল আলম, আজ থেকে তিন বছর আগেও একটি হোটেলের বয় হিসাবে চাকুরী করত। হঠাৎ এতো টাকার মালিক কিভাবে হলো তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই ধারণা করছেন, এর এ রেস্তোরার পাশাপাশি তার অবৈধ ব্যবসাও রয়েছে।
এদিকে হাসপাতাল সড়কের একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দোয়েল রেস্তোরায় উদ্বোধনের পর থেকে গলাকাটা বাণিজ্য করে আসছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে কয়েকবার তার রেস্তোরায় প্রশাসন অভিযান চালালেও সে তা তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে তার অপরিচ্ছন্ন হোটেলটি।
দোয়েল পাখি রেস্তোরার মালিকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
উপরোক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই রেস্তোরার মালিকের বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ রয়েছে এবং আমরা তাকে অনেকবার জরিমানাও করেছি এবং শীঘ্রই এই হোটেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।